রবিবার, ১৪ আগস্ট, ২০১১

 
জীনের ডিম
শফিউদ্দিন সরদার
2.
বেহুঁশ হয়ে রফিক কতক্ষণ দাঁড়িয়েছিল তা তার খেয়াল নই। খেয়াল হলো কয়েকজন চাকরের ডাকে। কয়েকজন চাকর একটা খুবই দামী চেয়ার এনে সেখানে পেতে দিয়ে বললো- হুজুর, এতক্ষণ দাঁড়িয়ে আছেন কেন? বসুন হুজুর, এই চেয়ারটায় বসুন। হায় হায়, হুজুরের পায়ে নিশ্চয়ই এতক্ষণ ব্যথা ধরে গেছে।
তাদের দিকে চেয়ে রফিক বললো- তোমরা কারা?
চাকরদের মধ্যে একজনের নাম ঈশান আলী। ঈমান আলী বললো- আমরা আপনারই চাকর-নকর হুজুর। আপনারই খেদমতে আমাদের চাকুরী দেওয়া হয়েছে।
রফিক বললো- চাকুরী দেওয়া হয়েছে? কে দিয়েছে চাকুরী?
ঈমান আলী বললো- আমাদের আম্মা বেগম হুজুর। আম্মা বেগম চাকুরী দিয়েছেন আমাদের।
রফিক বললো- আম্মা বেগম! সে আবার কে?
ঈমান আলী বললো- আপনার বউ হুজুর। আপনার বিবি।
রফিকের তাজ্জব হয়ে বললো- আমার বউ!
ঈমান আলী বললো- জি হুজুর। এই প্রাসাদেই তো আছেন তিনি। খাসা হুজুর। আপনার বিবি, মানে আমাদের আম্মা বেগম খাসা দেখতে। একদম পরীর মতো।
একথা বলে একটু শরম পেলো ঈমান আলী। মাথা নীচু করে সে হাত কচলাতে লাগলো। রফিক বললো- তোমরা দেখেছো তাকে?
ঈমান আলী বললো- দেখবো না কেন হুজুর। এই তো একটু আগেই আপনার ঘরে গেলেন তিনি।
কিছুক্ষণ চিন্তা করে রফিক বুঝলো, এটা তাহলে নিশ্চয়ই ডিমের মধ্যে থাকা রূপসী কন্যার কাজ। এটা বুঝতে পেরে রফিক আবার প্রশ্ন করলো- কখন দিলো চাকুরী তোমাদের?
ঈমান আলী বললো- এই তো কিছুক্ষণ আগে হুজুর। আপনি তখন ঘুমিয়ে ছিলেন।
রফিক আর অবাক হলো না। কত আর অবাক হবে সে। দিন ধরেই তো এসব হতেই আছে হরদম। তাই আর কোন কথা না বলে রফিক চুপ হয়ে গেল।
কিন্তু এসব দেখে চুপ হয়ে রইলো না সে গাঁয়ের বদ লোকেরা। বদ লোকের মধ্যে দুইজনের বাড়ী রফিকের বাড়ীর একদম নিকটে। এদের একজনের নাম আনজাত আর অন্যজনের নাম মুনতাজ। এই আনজাত আর মুনতাজ তখনই দৌড় দিয়ে বদ নায়েবটার কাছে গেল। এই বদ নায়েবটাই তো রফিকের বাপের সব জমি কেড়ে নিয়ে আনজাত-মুনজাত এইসব বদ লোকদের দিয়েছে। নায়েবের কাছে এসে আনজাত হাঁপাতে হাঁপাতে বললো- নায়েব বাবু, নায়েব বাবু, একি অবাক কাণ্ড! এক দেশে দুই রাজা।
নায়েব প্রশ্ন করলো- দুই রাজা কেমন?
আনজাত বললো- আমাদের রাজা মশাইতো আছেই। এর উপর আবার আমাদের গায়ের রফিকটাও রাজা হয়ে গেছে। বিশাল রাজবাড়ীর মতো তার বাড়ী আর রাজরানীর চেয়ে সুন্দরী তার বউ।
শুনে নায়েব বললো- এ্যাঁ! বলো কি! রাজা হয়ে গেছে। তাহলে চলো, চলো, এখনই খবরটা আমাদের রাজা মশাইকে দিই- চলো। শুনলে রফিকের রাজা হওয়াটা বের করে দেবে রাজা মশাই।
তারা তিনজনই এবার একসাথে চলে এলো সেই এলাকার রাজার কাছে। সব কথাশুনে রাজা তো ক্ষেপে টং। বললো- কি এত বড় সাহস! আমি রাজা থাকতে আমার রাজ্যে রাজা হয় আর একজন? আমার সাথে পাল্লা দিয়ে রাজবাড়ী বানায়? এই, কে আছিস! এখনই বেঁধে আন ব্যাটা রফিককে।
সেপাইদের ডাক দিলো রাজা। সঙ্গে সঙ্গে মুনতাজ বললো- শুধু রফিককে নয় কর্তা! রফিকের বউটাকেও ধরে আনুক আপনার সেপাইরা।
রাজা বললো- কেন, ওর বউ এনে আমি কি করবো?
মুনতাজের আগেই জবাব দিলো আনতাজ। আনজাত বললো- রাণী বানাবেন রাজামশাই। ওর বউটা এতই সুন্দরী, আপনার সাতসাতটা রানীর মধ্যে কেউই এত সুন্দরী নয়।
রাজা বলল- কি করে বুঝলে?
আনজাত বললো- আপনার রানীরা তো আঁধার রাতে বাইরে এলে একটুও আলো পড়ে না কোথাও। অথচ রফিকের বউ বাইরে এলে তার রূপের আলোতে চারদিক ফর্সা হয়ে যায়। এতই ফর্সা হয়, মাটিতে একটা সুই পড়ে থাকলেও তা দেখা যায়।
রাজা বললো- বলো কি! এতই সে সুন্দরী?
আনজাত বললো- জ্ঞে হ্যাঁ রাজা মশাই। এতটাই সে সুন্দরী।
রাজা ফের প্রশ্ন করলো- তুমি তাকে দেখেছো?
আনজাত বললো- দেখেছি মানে কি। রফিকের বাড়ীর একদম লাগালাগি আমার বাড়ী। রফিকের বউ প্রায় রাতেই ঘর থেকে বাইরে এসে কোথায় যেন যায়। বউটা ঘর থেকে বেরোলেই তার রূপের আলোতে চারদিক রোশনাই হয় যায়। আমার জানালাতেও রূপের আলো এসে লাগে।
রাজা একদম নেচে উঠে বললো- হ্যাঁ! এয়সা বাত। ঠিখ হ্যায়। আলবত ওকে আমি আমার আর এক রাণী বানাবো।
এই বলেই রফিক এবং রফিকের ঘরে থাকা মেয়েটাকে ধরে আনার জন্য রাজা তখনই কয়েকজন সেপাই আর এক সেনাপতি পাঠিয়ে দিলো।
সেপাইদের নিয়ে সেনাপতি রফিকের বাড়ীর কাছে আসতেই ভাংগা মসজিদ থেকে বেরিয়ে এলেন জীনটা। দূরে থেকে তার j¤^v হাত দিয়ে জোরে একটা থাপপড় মারতেই সেপাই কয়টা ভর্তা হয়ে মাটির সাথে মিশে গেল। কি দিয়ে কি হয়ে গেল, সেনাপতিটা কিছুই বুঝতে পারলো না। সেপাইদের মাটির সাথে মিশে যেতে দেখেই সেনাপতি পেছন থেকে দিলো ভো দৌড়। এক দৌড়ে এসে রাজার সামনে আছাড় খেয়ে পড়লো এবং কাঁপতে কাঁপতে বললো- বিরাট শক্তিমান লোক রাজা মশাই, রফিকটা বিরাট শক্তিমান লোক। কয়জন সেপাই দিয়ে তার কিছুই করা গেল না। সেপাইরা সব মারা গেল।
শুনে রাজা ক্ষেপে একদম আগুন হয়ে গেল। সিংহাসন থেকে লাফ দিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে বললো, কি, ব্যাটার এত বড় সাহস? আমার সেপাই মারে, ওর ঘাড়ে কয়টা মাথা আছে! শয়তানটাকে নিজে আমি দেখবো।
এই বলেই, রাজা তার প্রধান সেনাপতিকে ডেকে বললো- আমি নিজে যাচ্ছি ব্যাটা রফিককে শায়েস্তা করতে। আমার সমস্ত সৈন্য নিয়ে তুমি আমার পেছনে পেছনে এসো।
রাজা তখনই সিংহাসন থেকে নেমে এলো এবং তলোয়ার খুলে নায়েব, আনজাত আর মুনতাজকে বললো- এসো, তোমরা আমার সাথে এসো। ব্যাটা রফিকের কি দশা করি আমি, তা দেখবো এসো।
তিনজনকে সাথে নিয়ে রওয়ানা হলো রাজা। রফিকের গাঁয়ের কাছে আসতেই গাঁয়ের সকল বদলোক খুশি হয়ে এক দৌড়ে রাজার কাছে এলো। রফিকের সৌভাগ্য দেখে সবাই হিংসায় জ্বলে পুড়ে মরছিলো। রাজা এবার রফিকটাকে কেটে কেমন টুকরো টুকরো করে তা দেখার জন্য তারা আনন্দে নাচতে নাচতে এসে রাজার সাথে যোগ দিলো।
রাজাকে আসতে দেখে ঘাবড়ে গেল রফিক। কিন্তু তাকে কিছুই করতে হলো না। বদলোকদের নিয়ে রাজা রফিকের বাড়ীর কাছে আসতেই বেরিয়ে এলো জীনটা। সে j¤^v একটা দড়ি তাদের দিকে ছুড়ে দিয়ে রাজা এবং রাজার সাথের সব লোকগুলোকে খড়ির বোঝার মতো করে এক পলকে বেঁধে ফেললো। এরপর তাদের এনে একটা গাছের সাথে শক্ত করে বেঁধে রাখলো।
এর মধ্যেই রাজার সবগুলো সৈন্য নিয়ে চলে এলো প্রধান সেনাপতি। রাজার অন্যান্য সেনাপতিও তার সাথে এলো। তা দেখে জীনটা এবার সেই দিকে এগিয়ে এলো। আকাশের দিকে হাত বাড়াতেই জীনটার হাতে চলে এলো তাল গাছের মতো মোটা আর j¤^v লোহার এক লাঠি। সেই লাঠি দিয়ে দমাদ্দম কয়েকটা বাড়ি মেরে জীনটা রাজার সব সেনাপতি আর সৈন্যদের একদম মাটির সাথে মিশিয়ে দিলো। এমনভাবে মিশিয়ে দিলো যে, তাদের কারো হাড় হাড্ডিও খুঁজে পাওয়া গেলো না।
সাফ হলো সব দুশমন। রফিকের আর কোন শত্রু রইলো না। জীনটা এরপর দেশের সব লোকদের ডেকে এনে হাজির করলো সেখানে। রফিককে দেখিয়ে দিয়ে তাদের বললো- এখন থেকে তোমাদের রাজা এই রফিকুল ইসলাম। তোমরা কি এতে খুশি?
দেশের সকল লোক বিপুল আনন্দে একসাথে বললো- খুশী হুজুর, আমরা সবাই খুব খুশী। এই নতুন রাজা খুব আর ঈমানদার মানুষ এটা আমরা আগে থেকেই জানি। আগের রাজা আর তার নায়েবটা ছিল খুব বদ। আমাদের জ্বালিয়ে মেরেছে।
জীনটা বললো- বেশ, তাহলে তোমরা যাও। রাজা কখনোই দুঃখ দেবে না তোমাদের।
লোকজন সব চলে গেল। তামাম ঝুট ঝামেলা মিটে গেল। রফিক খুশি হয়ে জীনকে বললো, আপনি বড়ই মহ হুজুর। আমার জন্যে কত কি করলেন।
জীনটা হাসিমুখে বললো- না, করা আমার এখনো শেষ হয়নি। আর একটা কাজ বাঁকি আছে। আর সে কাজটা হলো তোমার শাদি, মানে বিবাহ দেওয়া।
রফিক তাজ্জব হয়ে বললো- আমার বিবাহ? কার সাথে আমার শাদি, মানে বিবাহ দেবেন হুজুর?
জীন বললো- কেন, তোমার ঘরে ডিমের মধ্যে যে মেয়ে আছে তার সাথে। সে একজন আল্লাহভক্ত, ঈমানদার আর রুপসী মেয়ে। তুমিও একজন আল্লাহভক্ত, ঈমানদার আর দর্শনধারী ছেলে। তাই মেয়েটা তোমাকে খুব ভালবেসে ফেলেছে। আমার মনে হয়, তুমিও তাকে পছন্দ করো। তাই তোমাদের শাদিটা এবার হয়ে যাওয়া উচিত।
রফিক খুশি হয়ে বললো- হুজুর আমার মনের কথাই বলে ফেলেছেন। কিন্তু হুজুর, মেয়েটা ডিমের মধ্যে এলো কি করে?
জীন বললো- সে অনেক কথা। তবে ডিমের মতো দেখতে হলেও, ওটা ডিম নয়। ওটা একটা নিরাপদ কৌটা বা বাকসো। আমিই মন্ত্র দিয়ে বাকসোটা তৈয়ার করেছি। কোন দুশমন বাকসো ভাংতে পারবে না। মেয়েটা যখন ইচ্ছা তখনই ডিমের মতো বাকসো থেকে বেরিয়ে আসতে পারবে, আবার বাক্সের মধ্যে যেতে পারবে। তবে তোমাদের শাদি হয়ে গেলে, মেয়েটার আর কৌটা মানে বাক্সের মধ্যে যাওয়ার দরকার হবে না।
রফিক বললো- তাই নাকি হুজুর! বড় তাজ্জব কথা। তা মেয়েটাকে বাক্সের মধ্যে যেতে হলো কেন, সে কথাটা একটু বলুন হুজুর। সে কথাটা শুনার আমার খুবই ইচ্ছে হচ্ছে।
জীন বললো- শুনবে? বেশ শুনো। এটা একটা j¤^v কাহিনী। এই মেয়েটা হলো পারস্য দেশের এক মস্তবড় বাদশাহর মেয়ে। একটি মাত্র সন্তান তাদের। অনেক দোআ কালাম পড়ার পর এই মেয়েটি জন্মে। মেয়েটা দেখতে অপরূপ সুন্দরী হওয়ায় একটা দুষ্ট জীন তাকে বিয়ে করতে চায়। বাদশাহ তাতে রাজী হয় না। এতে করে দুষ্ট জীনটা বাদশাহ বেগম আর পরিবারের সবাইকে মেরে ফেলে। সেনা সৈন্য সব মেরে ফেলে আর বাদশাহর দালান কোটা সব ভেংগে চুরে ধুলোর সাথে মিশিয়ে দেয়। এরপর এই মেয়েটাকে ধরার জন্য দুষ্ট জীনটা তাড়া করতে থাকে। ঠিক সময় আমি সেখানে এসে হাজির হই। তখনই দুষ্ট জীনকে হত্যা করে আমি মেয়েকে রক্ষা করি।
একটু থেমে জীনটা ফের বললো- এরপরে মহা চিন্তায় পড়ে গেলাম আমি। মেয়েটাকে রাখি কোথায়? বাপ-মা নেই, আত্মীয় কুটুম নেই, বাড়ী ঘরও নেই! একে কোথায় আর কার কাছে রেখে যাই? বাধ্য হয়ে অবশেষে মেয়েটাকে আমার নিজের কাছেই রেখে দিলাম। খোলামেলা রেখে দিলে আবার কোন বদ জীনের বা বদ মানুষের নজরে পড়তে পারে ভেবে, আমি ডিমের মতো বাক্সটা তৈয়ার করলাম আর বাক্সের মধ্যে মেয়েটাকে রাখলাম। এর ফলে মেয়েটার আর বিপদ থাকলো না। মেয়েটা যেমনই আল্লাহভক্ত, তেমনই সুন্দরী। আমি স্থীর করলাম, এই রকম একটা আল্লাহভক্ত আর সুন্দর ছেলের সাথে মেয়েটার বিয়ে দিয়ে দেবো।
এই খানি বলে জীনটা থেমে গেল। অনেকক্ষণ সে আর কথা বলছে না দেখে রফিক প্রশ্ন করলো- তারপর? তারপর কি হলো হুজুর?
জীনটা ফের বললো- তারপর আমি ভেবে দেখলাম, পাহাড়ম ঘেরা মরুভূমির দেশে বদজীনের পাত খুব বেশী। তাই মনে মনে ঠিক করলাম, মেয়েটাকে তোমাদের দেশে এনে আল্লাহর প্রতি ভক্তিওয়ালা একটা ছেলের সাথে শাদি দিয়ে আমি আমার দায়িত্ব শেষ করবো। এই চিন্তা করে মেয়েটাকে রাখা ডিমের মতো বাক্সোটা পকেটে তুলে নিলাম আর তোমাদের দেশের দিকে আসতে লাগলাম। এই আসতে গিয়েই বিপদ হলো আমার।
রফিক বললো- কি বিপদ হুজুর?
জীন বললো- মস্তবড় বিপদ। আসার পথে কখন যে এক আল্লাহওয়ালা দরবেশের আস্তা ভেঙ্গে ফেলেছি আমি বুঝতে পারি নি। বুঝতে পারলাম দরবেশ আমাকে ধরে ফেলার পরে। কিছু বলার আর সময় পেলাম না। দরবেশ সাহেব তখনই আমার পকেটে ডিমসমেত আমাকে কলসীর মধ্যে ভরে ফেললেন। এরপরে কলসীটা এনে তোমাদের এই জংগলে পুঁতে রেখে গেলেন। বলে গেলেন, আল্লাহভক্ত ঈমানদার কোন ছেলের হাতে পড়লে তবেই তুমি মুক্তি পাবে।
রফিক বললো- তারপর হুজুর?
জীন বললো- আমি বেজায় ঘাবড়ে গেলাম। ভাবলাম কতশত বছর বুঝি আমাকে এই মাটির তলে থাকতে হবে। তাই হরদম আল্লাহ আল্লাহ করতে লাগলাম। এতে আল্লাহর দয়া হলো। বছর দুই না যেতেই তুমি আমাকে তুলে আনলে আর কলসীর মুখ খুলে আমাকে মুক্তি দিলে। তখনই বুঝলাম, তুমি একজন ঈমানদার আল্লাহভক্ত ছেলে।
জীনটা মৃদু মৃদু হাসতে লাগলো। রফিক বললো- বাপারে! এযে এক তাজ্জব কাহিনী। তা মেয়েটার কোন নাম নেই হুজুর?
জীন বললো- আছে আছে। মেয়েটার বাপ-মায়ে নাম রেখেছিলেন খাতুনে জান্নাত ফজিলাতুন নেছা। মেয়েটা দেখতে ফুলের মতো সুন্দর বলে আমি ছোট করে নাম রেখেছি- ফুল বানু। অতবড় নামে না ডেকে আমি তাকে ফুল বানু বলেই ডাকি। এই ফুল বানুর সাথেই তোমাকে এখনই শাদি দিতে চাই তুমি রাজী?
মনে মনে খুব খুশি হয়ে রফিক বললো- জি হুজুর, রাজী।
জীনটা তখনই ডাক দিলো- ফুল বানু, ফুলবানু আম্মা, এখানে এসো-
ডাক শুনেই ডিমের মধ্যে থাকা মেয়েটি তখনই সেখানে এসে হাজির হলো। ইতিমধ্যে কয়েকজন মোল্লা মুসল্লী মানুষকে ডেকে আনা হয়েছিল। জীনটার অনুরোধে তারাই রফিকুল ইসলামের সাথে ফুল বানুর মাদি পড়িয়ে দিলেন।
শাদির অনুষ্ঠান মিষ্টি বিতরণ শেষ হলে, মুসল্লীরা চলে গেলেন। এরপর জীনটা রফিকুল ইসলাম ফুলবানুকে বললো- তোমরা সুখে থাকো আব্বা, সুখে থাকো আম্মা, আমি আসি। আমাকে বিদায় দাও, আমি আমার নিজের জায়গায় চলে যাই।
শুনে রফিক ভয়ে ভয়ে বললো- চলে যাবেন হুজুর? এরপর আমাদের উপর কোন দুশমনের হামলা হলে আমাদের রক্ষে করবে কে?
জীনটা বললো- ভয় নেই বাপজান। তোমরা আল্লাহ ওয়ালা ঈমাদান লোক। আল্লাহ তায়ালাই তোমাদের রক্ষে করবেন। ছাড়া আমি যেখানেই থাকিনে কেন সব সময় আমার নজর থাকবে তোমাদের উপর। কোন মুসিবত দেখলে তখনই আমি ছুটে আসবো তোমাদের কাছে।
রফিক বললো- আসবেন তো হুজুর?
জীনটা বললো- আলবত আসবো। কথা দিলাম তোমাদের। তাহলে আসি বাপজান! আল্লাহ হাফেজ।
রফিক ফুলবানু এক সাথে বললো- আল্লাহ হাফেজ।
জীনটা এবার উড়াল দিলো আকাশে এবং আস্তে আস্তে বাতাদের সাথে মিলিয়ে গেল।
সেই দিকে চেয়ে রইলো রফিক ও ফুলবানু। এই সময় একটি অচিনপাখী আকাশে দেখা গেল। পাখীটা গেয়ে গেল ‘বদ লোকেরা সাজা পেলো, স লোক রাজা হলো- ডিং, ডিং, ডিং।
রফিক ও ফুলবানু এরপর পরম সুখে দিন কাটাতে লাগলো।
**********

1 টি মন্তব্য: